করোনা কী এবং এর ব্যাপারে আমি কী করতে পারি?

করোনাভাইরাস বা করোনা হলো একটি ক্ষুদ্র জীবাণু (এতো ছোট যে তা খালি চোখে দেখা যায় না) যা ছড়িয়ে পরে মানুষকে অসুস্থ করে ফেলতে পারে। করোনার কারণে ফ্লুর মতো উপসর্গ দেখা দেয়, যেমন শুষ্ক কাশি, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও শরীর ব্যাথা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে করোনা শ্বসনতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যদিও অধিকাংশ সংক্রমণ বিপজ্জনক নয়, তবে এটি নিউমোনিয়ার কারণ হতে পারে (ফুসফুসের একটি গুরুতর সংক্রমণ) এবং মারাত্মক ক্ষেত্রে এটি ভয়াবহ হতে পারে।

যেকোনো ব্যক্তিরই করোনা হতে পারে। বয়স্ক লোকজন এবং যেসকল মানুষের ইতোমধ্যে অন্যান্য অসুস্থতা রয়েছে - যেমন শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা, ক্যান্সার বা ডায়াবেটিস - তাদের ক্ষেত্রে আরও গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে।

যখন কোনো সংক্রমিত ব্যক্তি শ্বাসপ্রশ্বাস নেন, অন্য লোকের উপর, কোনো পৃষ্ঠতল বা খাবারের উপর কাশি বা হাঁচি দেন, তখন ছোট ফোটা বা ড্রপলেটের আকারে করোনা ছড়িয়ে পরে। এটি মুখগহ্বর, নাক ও চোখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। একবার শরীরে প্রবেশ করার পর এটি বংশবিস্তার করা শুরু করে এবং অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে যায়। শরীরে বাহ্যিকভাবে অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দেওয়ার পূর্বে করোনা শরীরে 14 দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। তাই, মানুষের শরীরে করোনা থাকলেও তারা তা নাও জানতে পারে এবং ভাইরাসটি অন্যদের শরীরে ছড়িয়ে দিতে পারে।

অ্যান্টিবায়োটিক বা বাড়িতে থাকা কোনো প্রতিকারক দিয়ে করোনা মারা সম্ভব হয় না। শুধুমাত্র এর সংস্পর্শ এড়িয়ে এবং বারবার হাত ধোয়ার মাধ্যমেই করোনা প্রতিরোধ করা যাবে।

সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাবান ও পানি দিয়ে আপনার হাত ধৌত করুন। আপনার হাতগুলোতে ময়লা দেখা না গেলেও হাত ধৌত করবেন। প্রবাহিত পানির নিচে 20 সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে খুব ভালোভাবে হাত ধৌত করুন এবং আঙ্গুলের নখের নিচ ও উপর সহ পুরো হাত ও কবজি অবশ্যই ঘষবেন। সাবান ও পানি দিয়ে আপনার হাত ধৌত করলে তা আপনার হাতে থাকা সম্ভাব্য ভাইরাসগুলো মেরে ফেলবে। আপনি খাবার তৈরি করার পূর্বে, করার সময় ও পরে, শৌচাগার বা টয়লেট ব্যবহার করার পরে, খাবার পূর্বে, অসুস্থ রোগীর সেবা শুশ্রূষা করার সময়, জীবজন্তু বা জীবজন্তুর বর্জ্য নিয়ে কাজ করার পরে এবং কাশি, হাঁচি দেওয়ার বা নাক পরিস্কার করার পর সবসময় হাত ধৌত করবেন।

আপনার হাত ধৌত না করে আপনার চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না। হাত দিয়ে অনেক কিছুর পৃষ্ঠতল ছোঁয়া হয় বলে তার মাধ্যমে ভাইরাস আসতে পারে। একবার সংক্রমিত হয়ে গেলে, হাত আপনার চোখ, নাক বা মুখে ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে। সেখান থেকে ভাইরাস আপনার শরীরে প্রবেশ করতে পারে এবং আপনাকে অসুস্থ করে দিতে পারে।

জ্বর ও কাশি বা শ্বাসযন্ত্রের অন্যান্য উপসর্গ রয়েছে এমন কারো নিবিড় সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাশি বা হাঁচি দেওয়ার সময় সবসময় আপনার মুখ ও নাক আপনার ভাঁজ করা কনুই দিয়ে বা টিস্যু দিয়ে ঢেকে রাখুন। তারপর ব্যবহৃত টিস্যু তাৎক্ষণিকভাবে ফেলে দিন। জনসমাগমস্থলে থুতু ফেলবেন না।

কাশি বা হাঁচি দিচ্ছেন এমন কারো সাথে আপনি কমপক্ষে 1 মিটার (3 ফুট) দূরত্ব বজায় রাখুন। জ্বর ও কাশি আছে এমন কারো সাথে নিবিড় সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।

যদি জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট আছে এমন কোনো ব্যক্তির সেবা শুশ্রূষা করার প্রয়োজন হয়, তবে একটি সুরক্ষামূলক মাস্ক বা কাপরের মাস্ক পড়তে এবং বিশেষ করে, হাতের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার চর্চা করতে ভুলবেন না।

করোনা প্রতিরোধ করতে, অন্যদের সাথে শারীরিক সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা সবচেয়ে নিরাপদ। করমর্দনের মাধ্যমে করোনা ও অন্যান্য ভাইরাস অন্যজনের শরীর থেকে আপনার হাতে এবং তারপর আপনার চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করার ফলে আপনার শরীরে চলে যেতে পারে। তাই, অন্যদের সাথে দেখা হওয়ার পর, করমর্দন, কোলাকুলি বা চুম্বন করার মাধ্যমে কাউকে সম্ভাষণ করবেন না। তার পরিবর্তে হাত নেড়ে, মাথা ঝাঁকিয়ে বা সামনের দিকে ঝুঁকে মানুষকে সম্ভাষণ করুন। আপনার যদি মনে হয় যে আপনার এলাকায় করোনা রয়েছে, তবে অন্যদের সাথে সংস্পর্শ এড়ানোর জন্য বাড়িতে থাকুন।

আপনি যদি অসুস্থ বোধ করেন, এমনকি মাথাব্যাথা ও হালকা নাকে পানি ঝরার মতো মৃদু উপসর্গ দেখা দেয়, তবে তা উপশম না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকুন। আপনি যদি হাঁচি দেন, আপনার যদি শুষ্ক কাশি থাকে, শ্বাসকষ্ট হয় এবং জ্বর থাকে, তবে প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা নিন, কারণ এটি শ্বাসনালীর সংক্রমণ বা অন্যান্য গুরুতর অসুস্থতার কারণে হতে পারে।

করোনা সম্পর্কে মিথ্যা ধ্যানধারণা ও গুজব খুবই বিপজ্জনক এবং এর ফলে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, ব্লিচ বা অ্যালকোহলের মতো বস্তু পান করলে তা করোনা প্রতিরোধের পরিবর্তে আপনার ক্ষতি করবে। আপনার বন্ধুবান্ধব বা নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যও ভুল বা বিপজ্জনক হতে পারে। শুধুমাত্র আপনা স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত গণ স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সঠিক পরামর্শ মেনে চলুন।

এই বার্তাটি ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে আপনি করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করতে পারেন। অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সাথে এটি শেয়ার করুন, বিশেষ করে, হোয়াটসঅ্যাপের মতো কোনো ম্যাসেজিং পরিষেবা ব্যবহার করে।

এই বিষয়বস্তুটি অডিওপেডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত। অডিওপেডিয়া হলো স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জ্ঞান শ্রবণযোগ্য করার একটি বৈশ্বিক প্রকল্প। www.audiopedia.org থেকে আরও জেনে নিন।